বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলায় ৪ আইনজীবীকে শোকজ

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:19 মে 2025, 12:30 রাত
news-banner

হত্যাচেষ্টা ও চাঁদা দাবির মামলায় আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলে তকমা ও গালিগালাজ করে হেনস্থার অভিযোগ উঠায় চার বিএনপিপন্থী আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আজ রবিবার সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এ নোটিশ পাঠানো হয়।

তারা হলেন ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহবায়ক খোরশেদ আলম, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ ও অ্যাডভোকেট এস এম ইলিয়াস হাওলাদার।

নোটিশে বলা হয়, গত ১৭ মে ,ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আপনাদের ‘অপেশাদারিত্বমূলক’ আচরণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যা দলীয় ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। এহেন অযাচিত এবং অপেশাদার মূলক আচরণের জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত পূর্বক সভাপতি ও মহাসচিব বরাবরে লিখিতভাবে আগামী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখা করার জন্য আপনাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সিদ্ধান্তক্রমে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হলো।

জানা গেছে,গত শনিবার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আদেশ নিজেদের মনের মতো না হওয়ায় বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলে তকমা দিয়েছেন নোটিশ প্রাপ্ত আইনজীবীরাসহ বিএনপিপন্থী কয়েকজন আইনজীবী। তারা ঢাকার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো. জুনাইদকে হেনস্তা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হত্যাচেষ্টা মামলা। হানিফ মেম্বার নামে এক আসামির জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিন শুনানি করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে আইনজীবীরা স্যারের সঙ্গে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। ফ্যাসিবাদের দোসর, দালাল বলেন। আদালতের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলে দেন। স্যার জামিন নামঞ্জুরের অর্ডার দেন। তখন আইনজীবীরা বিষয়টা পুনর্বেচনার আবেদন করেন। স্যার বলেন, ‘‘অর্ডার তো দিয়ে দিয়েছি। যদি আবার শুনানি করতে চান তাহলে সিএমএম স্যারের কাছে স্পেশাল পুট আপ দিতে পারেন। প্রয়োজনে আমি আবার শুনব।” কিন্তু তারা তা না করে শুনানি করতে জোরাজুরি করেন। স্যার বলেন, ‘‘প্রকাশ্য আদালতে জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।” তারা স্যারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, হুমকি দেন।’

মামলার বাদী ফজলুল হক বলেন, ‘আসামি হানিফ মেম্বার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৫ বছর নির্বাচন ছাড়া শাক্তা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ছিল। লোকজন নিয়ে জমি দখল করত। সে নৌকা বাইত। বৃষ্টি নামলে ঘরে থাকতে পারত না, ভিজে যেত। এখন সে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। বহু মানুষের জমি দখল করছে। জালিয়াতি করে মসজিদের জমিও রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করছে। এক পাগলে ২৪ শতাংশ জমি জাল করে বিক্রি করছে। তিতাস গ্যাসের লাইন এনে দিবে বলে অনেকের থেকে এক লাখ/দেড় লাখ করে টাকা নিছে। অবৈধ গ্যাসের লাইন এনে দিয়েছিল। তবে কিছুদিন পরে তিতাস এসে লাইনের গ্যাস কেটে দেয়।আমি হজে থাকাবস্থায় আমরা বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেয়। আরও দুইটা মামলাও করে।’

তিনি বলেন,‘আমরা দুইটা প্লট। একটা প্লট জেসমিন নামের একজনের কাছে বিক্রি করেছিস আরেকটিতে আমি আছি। জেসমিন ধানমন্ডিতে থাকে। তার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে, সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। আমার জমি দখলের চেষ্টা করে, কেয়ারটেকারকে মারধর করে। আমার স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে। আমি মামলা করছি। হানিফ জেলে থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আগে একদিন কোর্টে গিয়ে জামিনের বিরোধী করি। উকিলরাও হুমকি দিছে। দাঁড়াইতে পারিনি। মন্ত্রীর চেয়ে তার প্রভাব বেশি। কেরানীগঞ্জ কামরুল সাহেব এর ১০ ভাগের দুই ভাগও প্রভাব দেখাতেন না। ও যা দেখায়।’

গত ৬ মে ফজলুল হক হানিফ মেম্বারসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার শাক্তা ইউনিয়নের আরশিনগরে ১৩ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি করেন। তবে আসামিরা জমিটি দখলের পায়তারা করতেছে। গত ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি তাকে আসামিরা গালিগালাজ করেন এবং জমিটি ছেড়ে দিতে বলেন। জমি না ছাড়লে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ২৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ফজলুল হক। গত ৫ মে তারা ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে ভাংচুর চালায়। তার কেয়ার টেকারকে হত্যার উদ্দেশ্য হাত পা বাঁধে। তখন তার স্ত্রী এগিয়ে আসে। আসামিরা তাকে শ্লীলতাহানি করে। ফজলুল হকের বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলে।

মুল্যবান মন্তব্য করুন