বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হলে বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের রায়ে এই তারিখ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান মামুন, জামিল আক্তার এলাহী। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।
স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়।এ ঘটনায় দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।
কিন্তু আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দায়িত্ব দেন। পরে তদন্ত করে ১৯৯৭ সালে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে নতুনভাবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচ আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাদের বাদি দিয়ে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।বিচার শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন।
এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারের সময় ৩২ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। রায়ের পর ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন সাজার আরো ৭ আসামি আত্মসমর্পণ করেন।ফাঁসির আসামিরা হলেন এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম।
এ রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করেন। ওই বছর ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট মোট ৪৩ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। সেই সব আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের চূগান্ত শুনানির পর মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রাখলেন উচ্চ আদালত। ফাঁসির আসামিরা সবাই কারাগারে আছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চূড়ান্ত শুনানিতে সব আসামির খালাসের আরজি জানানো হয়েছে।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চূড়ান্ত শুনানিতে আমি বলেছি, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় গুলি এবং বোমা বিস্ফোরণের কোনো আলামত এই মামলায় পাওয়া যায়নি। এমনকি যে হামলার কথা বলা হচ্ছে, কথিত সেই হামলায় গুরুতর কেউ আহত বা নিহতও হয়নি। তারপরও ৯ জন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যে কারণে বিচারিক আদালতের বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা জব্দ করার আরজি জানিয়েছি হাইকোর্টের কাছে।’ ফাঁসির রায় দেওয়া সেই বিচারক রোস্তম আলী বর্তমানে বরিশালের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলে জানিয়েছেন আইন কর্মকর্তা মজিবুর রহমান।