৬ জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:28 এপ্রিল 2025, 09:46 রাত
news-banner

দেশের ছয় জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দুইজন এবং হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারে একজন করে। নিহতদের মধ্যে স্কুলছাত্র ও নারীও রয়েছেন।

রোববার রাতে ও সোমবার (২৮ এপ্রিল) এসব ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় বজ্রপাতে কৃষি জমিতে দুই কৃষক ও খেলার মাঠে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোর দুজন হলো পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) ও আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)। নিহতরা উভয়েই বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে যায়। বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বজ্রপাতে মৃত্যৃর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুইজন কৃষক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরো তিনজন। এঘটনার পর থেকে আহতরা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিহতরা হলেন, কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া।

মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে কৃষক নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও জুয়েল ভূইয়া জমিতে ধান কাটার কাজ করতে যান। ঝড়ের সাথে বিকট শব্দে কৃষি জমিতে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই বজ্রপাতে দুই কৃষক নিহত হন।

বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান কোরবানপুর গ্রামে বজ্রপাতে দুইজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, কুমিল্লার দেবিদ্বার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুমিল্লা দেবিদ্বারে নানার সাথে মাঠে ধান কাটা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মিম আক্তার (১০) নামে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

মিম আক্তার উপজেলা সাহার পাড় গ্রামের ইমন মিয়ার মেয়ে।

জানা যায়, উপজেলার ভানি ইউনিয়নের কোটকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার দুপুরে নানার সাথে মাঠে ধান কাটা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন জানান, একজন শিক্ষার্থী বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। তার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।

এদিকে, আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার পৃথক তিনটি হাওরে এসব বজ্রপাত হয়।

নিহতরা হলেন অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪)। এছাড়াও মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে বজ্রপাতে মারা গেছেন মরহুম আশ্রাব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬০)।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ইন্দ্রজিত দাস সকালে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। অপরদিকে স্বাধীন মিয়া খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান।

এদিকে মিঠামইন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্পণ বিশ্বাস জানান, সোমবার সকালে মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে বাড়ির পাশে খলায় ধানের কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম নামে এক নারী বজ্রপাতে মারা গেছেন।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং সংবাদদাতা জানান, বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এছাড়াও উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজন আহত হয়েছে। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা আক্তার সাথী জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। বানিয়াচং উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের পূর্বের হাওরে ধান কাটছিলেন কালাবাসী দাসের ছেলে দূর্বাসা দাস (৩৫) ও তার ভাইবোন।

আকস্মিক এক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে দুর্বাসা দাস নিহত হন। আহত হয় তার ভাই ভূষণ দাস (৩৪) ও বোন সুধন্য দাস (২৮)। তারা দুজনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) নামে এক শিশু আহত হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিহত কৃষকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় পৃথক বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২২) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে বাড়ির পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে যান রিমন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বজ্রপাতের শিকার হন। ঘটনাস্থলেই রিমন ও তার সাথে থাকা গবাদিপশুর মৃত্যু হয়।

এদিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান। উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার মদন উপজেলায় (হাওরাঞ্চল) মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আরাফাত (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একইসাথে কলমাকান্দায় দিদারুল হক (২৮) নামে এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়।

রোববার রাতে ও সোমবারে পৃথক জায়গায় তাদের মৃত্যু হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিশু আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করতো। প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজের পর সকাল ৬টার দিকে মাদরাসায় যাওয়ার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। নিহত আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান বলেন, বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে রোববার রাতে কলমাকান্দা উপজেলার হাফসা (রা:) মহিলা মাদরাসা ও আন নূর ইসলামী অ্যাকাডেমির শিক্ষক দিদারুল হক ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের কাছে বজ্রপাতে মারা যান। তিনি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধুনন্দ মধ্যপাড়া গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন।

মুল্যবান মন্তব্য করুন