মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টাকা গোপনে তুলে ৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:26 মে 2025, 12:58 রাত
news-banner

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫ লাখ টাকা পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করে রাখা হয়েছিল স্থানীয় কৃষি ব্যাংক শাখায়। কিন্তু ২ বছর যেতে না যেতেই সেই টাকা গোপনে উত্তোলন করা হয়। পরে ঘটনা জানাজানির পর চাপের মুখে পড়ে দীর্ঘ আট বছর পর সাবেক কমান্ডার,সহকারী কমান্ডার ও অন্য এক জনের নামে একই হিসাব ব্যবহার করে জমা রেখে দায় এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছিল। অবশেষে এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) এক চিঠি কৃষি ব্যাংকে গেলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়।

এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে।

স্থানীয় সূত্র ও বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, গত ২০১০ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঈশ্বরগঞ্জ শাখার চলতি হিসাব নাম্বার ৪৭৩০-০৩৩০০০৬৩১৭-তে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে পাঁচ বছরের জন্য ৫ লাখ টাকা এফডিআর বা স্থায়ী আমানত করে রাখা হয়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে দায়িত্বে ছিলেন কমান্ডার আব্দুছ ছাত্তার ও সহকারী কমান্ডার ছিলেন মো.তফাজ্জল হোসেন। এর মধ্যে এক সময় বেশ কয়েকজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আর্থিক সাহায্যের দাবি করে আসায় ব্যাংক হিসাবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ওই হিসাবে সামান্য কয়েক হাজার টাকা পড়ে রয়েছে।

এ অবস্থায় বিষয়টি সকলের নজরে এলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে জানা যায়, ব্যাংকের হিসাবে টাকা নেই। এফডিআর করা এই টাকা গত ২০১২ সালে উত্তোলিত হয়ে গেছে।

বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, তখন বিভিন্ন অজুহাত ও ক্ষমতা দেখিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিষয়টি কালক্ষেপণ করতে থাকে।

এর মধ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ইউএনওর দ্বারস্থ হলে নির্বাহী কর্মকর্তা টাকার পরিমাণ ও হিসাবের বিস্তারিত জানতে চেয়ে স্থানীয় কৃষি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দেন। চিঠির উত্তরে জানানো হয়, ওই হিসাব এখন আর সংসদের নেই। এই হিসাব পরিচালিত হচ্ছে তিন ব্যক্তির নামে। সেখানে ৯ লাখ টাকা জমা রয়েছে।

এমতাবস্থায় ইউএনও ওই তিন ব্যক্তি ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তলব করেন।

গত ২০ মে ইউএনও কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা তফাজ্জল হোসেন ও  নুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। অন্য অভিযুক্ত ছাত্তার কমান্ডার ছিলেন না। এ সময় দীর্ঘ শুনানি শেষে  উপস্থিত দুইজন স্বীকার করেন, নিজেদের নামের হিসাবে সংসদের টাকা জমা রাখা ঠিক হয়নি। এর জন্য তারা অনুতপ্ত। এ অবস্থায় তিনজন মিলে ওই হিসাব বন্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে ফের হিসাব চালু করে উল্লিখিত টাকা জমা রাখবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এফডিআরের টাকা গোপনে উত্তোলন করে তছরুপ করা হয়েছিল। পরে জানাজানি হলে দীর্ঘ আট বছর পর ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে টাকা জমা দেওয়া হয়। তবে এবার হিসাবটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে নয়, হিসাবটি খোলা হয়েছে তখনকার কমান্ডার আব্দুছ ছাত্তার, সহকারী কমান্ডার তফাজ্জল হোসেন ও অপর এক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হকের নামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবে সহকারী কমান্ডার ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বেয়াই তফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা তো টাকা খেয়ে ফেলিনি। সব টাকা আছে আমাদের হেফাজতে।

ঈশ্বরগঞ্জ  উপজেলা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু রায়হান জানান, ব্যাংকে যা চাওয়া হয়েছিল, তা স্বচ্ছভাবে জানিয়ে দিয়েছি। সংসদের নামের হিসাবটি হয়েছিল তিন ব্যক্তির নামে। তারা তো মুক্তিযোদ্ধা সংসদসংশ্লিষ্ট। এজন্য তখন কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন যা হয়েছে তা মীমাংসার পথেই রয়েছে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাব কমিটির প্রধান মো. হাবিবুর রহমান হলুদ জানান, এটা বড় ধরনের দুর্নীতি। এজন্য অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

মুল্যবান মন্তব্য করুন