টানা বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:31 মে 2025, 03:31 রাত
news-banner

টানা দু’দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আকাশ ঢেকে আছে কালো মেঘে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে, ২৮৫ মিলিমিটার।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ ঘনীভুত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ ও পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কারণেই বর্ষা মৌসুমের আগে আগে এমন বৃষ্টির দেখা মিলছে।

গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে বৃহস্পতিবার রাতে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, স্থলভাগে উঠে এসে এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি জানিয়ে প্রকাশিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল ও এ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল নিম্নচাপটি।

এতে বলা হয়, ‘এটি আরো উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃ্ষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে।’

স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘের উপস্থিতি রয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এর প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে আজও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তবে তার মাত্রায় হেরফের ঘটবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, আজ দেশের আটটি বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে।

তারপর থেকে বৃষ্টিপাত কমতে শুরু করবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক।

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালের বৃষ্টিও এর সাথে মিলে যাওয়ার কথা বলছেন তিনি।

ফলে, আগামী সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টির দেখা মিলবে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, উপকূলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর ক্ষেত্রে সঙ্কেত ২ এবং অন্যস্থানে ১ নম্বর সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে পূর্বাভাসে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ‘এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাসমূহের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।

একইসাথে ভারীবর্ষণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও তারা সতর্কবার্তা দেয়।

এদিকে, টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে পথে নামা মানুষকে পোহাতে হয় ভোগান্তি।

ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস

দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এসব এলাকার নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সংস্থা।

জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা। ফেনী বাদে বাকি পাঁচ জেলা হাওর অঞ্চলের।

বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বুলেটিনে জানিয়েছে, আগামী দু’দিন ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।

কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, ভারী বৃষ্টির প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে।

আর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পরের এক দিনে এসব নদীর পানি কমে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে সংস্থাটি।

আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এক বুলেটিনে সংস্থাটি বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিও আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। তিস্তার পানি নদীর সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

আগামী দু’দিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, তবে আগামী তিন দিন বাড়ার আভাস থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

আগামী এক দিন স্থিতিশীল থাকলেও পরবর্তী চার দিন পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচে থাকার আভাস রয়েছে।

এই বুলেটিনে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে।

নদী দু’টির পানি আগামী পাঁচ দিন বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা বিপৎসীমার নিচে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

সূত্র : বিবিসি

মুল্যবান মন্তব্য করুন