‘এবার কেউ চামড়া কিনতেই এলো না’

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:08 জুন 2025, 12:38 রাত
news-banner

প্রতি বছর দু’ এক শ’ টাকায় কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে থাকি, এবার তো কেউ কিনতেই এলো না। পরে বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ডোমখালী এলাকার সাদেক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার নাকি এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়িয়েছে। উল্টো কেউ কিনতে আসেনি। শুধু আমি নয়, আমার এলাকার অনেকে পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেনি।’

শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দু’ পৌরসভায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে মানুষ এবারো পড়েছেন বিপাকে। বলতে গেলে পানির দরেই বিক্রি হয়েছে পশুর চামড়া। গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা হয়েছে। ছোট গরুর চামড়া ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চামড়ার বাজারে ধস নামায় বঞ্চিত হয়েছেন দুস্থরা। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।’

মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার নিজাম উদ্দিন ও আবু জাফর বলেন, ‘এবার সারাদিন চলে গেলেও কেউই চামড়া ক্রয় করতে আসেনি। পরে টেরিয়াইল মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছি। শুধু আমরা নয়, আমাদের এলাকার অনেকে চামড়া এতিমখানায় দিয়েছেন।’

পাইকারিভাবে চামড়া ক্রয় করা হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলায় বেশিভাগ এলাকায় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন কিনে আমরা বিপাকে। দুপুরের পর থেকে বাজারে নিয়ে বসে আছি, কেউ জিজ্ঞেসও করছে না। মনে হয় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে।’

উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন অলিনগর এলাকার নবী উল্লাহ জানান, তিনি এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের গরু দিয়ে কোরবানি দিয়েছেন। তার গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ২৫০ টাকায়।

বারইয়ারহাট পৌরসভার জামালপুর এলাকার নুরুল আনোয়ার জানান, তাদের এলাকায় গত বছরের মতো এবারো কেউ চামড়া কিনতে না যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন নিকটবর্তী মাদরাসায় চামড়া দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, তাদের এলাকায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে চামড়া বিক্রির খবর শোনা গেছে।

বড়তাকিয়া বাজারের ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন জানান, তিনি প্রায় ৬০০ চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস চামড়া ১০০-৩০০ টাকা দরে কিনেছেন। তার সবগুলো চামড়াতে শ্রমিক দিয়ে লবণ যুক্ত করতে হবে। এতে পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকের কারণে চামড়ার ক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১৫০ টাকা। চামড়ার আকার বড় হলে দাম আরো বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু এমন ঘোষণার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। প্রতি বছরই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা নিয়ে অনেকে বিড়ম্বনায় পড়েন। প্রায়ই অভিযোগ আসে, চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় না। পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। অতীতে কখনো কখনো উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকেই চামড়া নিকটতম এতিমখানা দিয়ে দিয়েছেন।

মুল্যবান মন্তব্য করুন