গাড়ি আমদানিতে মংলা বন্দরের জোয়ার: রাজস্ব আয় ছুঁলো নতুন উচ্চতা

, প্রকাশ:30 জুলাই 2025, 04:25 দুপুর
news-banner

অপার সম্ভাবনাময় মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডের নামিদামি গাড়ি আমদানিকারকরা বর্তমানে এই বন্দরকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১,৫৭৯টি, যা রাজস্ব আয়ে দুই দশমিক আট তিন শতাংশ অতিরিক্ত আয় নিশ্চিত করেছে—মূল লক্ষ্য ছিল ৩৩৩.৩৩ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মংলা বন্দরের কার্যকর সংযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে ঢাকার সঙ্গে মংলার দূরত্ব প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ এবং কম সময়ের কারণে আমদানিকৃত গাড়ি পৌঁছাতে এখন লাগে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

ব্যবসায়ীদের মতানুসারে, এই সুবিধাজনক পরিবেশের ফলে শুধু গাড়িই নয়, অন্যান্য পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান দৈনিক সংগ্রামকে জানান, গত পাঁচ অর্থবছরে গাড়ি আমদানির চিত্র ছিল যথাক্রমে—২০২০–২১: ১৪,৪৭৪টি, ২০২১–২২: ২১,৪৮৪টি, ২০২২–২৩: ১৩,৫৭৬টি, ২০২৩–২৪: ১৫,৩৪০টি এবং ২০২৪–২৫: ১১,৫৭৯টি।

তাঁর মতে, ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ, জাহাজ জট না থাকা এবং পর্যাপ্ত গাড়ি রাখার জায়গা থাকার ফলে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে আমদানি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা।

বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহিন রহমান বলেন, “মংলা বন্দরে গাড়ি আমদানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আমদানিকারকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছি। একই সঙ্গে দ্রুত গাড়ি খালাস, আধুনিক শেড ও ইয়ার্ড নির্মাণ, নিরাপত্তা জোরদার করতে সার্বক্ষণিক টহল এবং সিসিটিভি মনিটরিং চালু করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা মংলা বন্দর থেকে দ্রুত গাড়ি নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারছেন। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিমি, সেখানে মংলা থেকে মাত্র ১৭০ কিমি। এই সুবিধাই আমদানিকারকদের মংলার দিকে ঝুঁকিয়ে দিচ্ছে।”

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)-এর সভাপতি আব্দুল হক আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে সামনে রেখে বলেন, “গাড়ির দাম বাড়ছে। যে গাড়ির মূল্য আগে ২০ লাখ টাকা ছিল, তা এখন ২৬-২৭ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে। এতে করে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা গাড়ি ক্রয়ে নিরুৎসাহিত হবেন এবং গাড়ি আমদানিতে ধীরগতি আসবে।”

তিনি সরকারের প্রতি গাড়ি আমদানির ওপর শুল্কহার হ্রাসের দাবি জানিয়ে বলেন, “যদি শুল্কহার কমানো হয়, তবে আরও বেশি মানুষ গাড়ি কিনতে পারবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।” তাঁর মতে, ট্যাক্স কমালে বাজারে গাড়ির প্রবাহ বাড়বে, সরকার অধিক কর পাবে এবং সমগ্র অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মংলা বন্দরের কাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবহন সুবিধা এবং ব্যবসায়ী-বান্ধব নীতিমালার কারণে এটি বর্তমানে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। পদ্মা সেতুর সুফল এবং সঠিক নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই খাতটি দেশের রাজস্ব আয়ে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

মুল্যবান মন্তব্য করুন