আশঙ্কা ছিল আগেই—রাতের ঘন অন্ধকারে সেই আশঙ্কাই বড় বিপদ হয়ে নেমে এল। গাজা উপত্যকার কাছাকাছি পৌঁছাতেই আন্তর্জাতিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। ভূমধ্যসাগরে জোরপূর্বক ফ্লোটিলার ১৩টি নৌকা আটক করেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী। এসব নৌকা থেকে ৩৭ দেশের ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও অবরোধ ভাঙার মিশন চালিয়ে যাচ্ছে কাফেলার বাকি নৌকাগুলো।
এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছে ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। ইতালিতে শুরু হয়েছে ধর্মঘট। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার অবরোধ ভাঙতে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১৩টি নৌকা আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব নৌকায় থাকা ৩৭ দেশের ২০১ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সুইডেনের মানবাধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন। এছাড়া স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জন নাগরিক আটক হয়েছেন। এখনো প্রায় ৩০টি নৌকা ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
গাজায় অবরোধ ভাঙতে ভোরের মধ্যেই পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে দখলদার সেনারা সর্বশক্তি দিয়ে সেসব নৌযান আটকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে পৌঁছাতেই অতর্কিত হামলা চালিয়ে ‘আলমা’ নামের একটি নৌকা আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর দেইয়া, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা ও সিরিয়াস নামের আরও পাঁচটি ত্রাণবাহী জাহাজ আটকানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার কাছাকাছি থাকা আরও সাতটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল। বাকি ৩০টি নৌকা এখন গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এই ফ্লোটিলাকে ইসরায়েল সরকার “হামাস ফ্লোটিলা” আখ্যা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফ্লোটিলা বহরের কয়েকটি নৌকা “নিরাপদভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে” এবং আরোহীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, গ্রেটা থুনবার্গ ও তার সহযোগীরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।
উল্লেখ্য, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মূলত সমুদ্রপথে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে এই বহর। এরপর ইতালি, গ্রিস, তুরস্ক, তিউনিসিয়া–সহ প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ অভিযাত্রী এই দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেন। বহরে রয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও অধিকারকর্মী শহীদুল আলমও।