নীতিনির্ধারক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাংবাদিকদের সহায়তায় ইসলামোফোবিয়া একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ইসলামোফোবিয়ার সৃষ্টির কারণ নয়। বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি প্রবণতার প্রতিফলন। নীতিনির্ধারক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাংবাদিকদের সহায়তায় ইসলামোফোবিয়া একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এটি শুধুমাত্র অতি-ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বাম, মধ্য এবং ডানপন্থী সংগঠন ও দলগুলোও এর প্রসারে ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালের গ্রীষ্মে, ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের আগে, ব্রিটেনে একটি ইসলামোফোবিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ‘একজন মুসলিম শরণার্থী তিন তরুণীকে হত্যা করেছে’ এই গুজবের ভিত্তিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হয়। মসজিদে হামলা, মুসলিম বলে মনে করা ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক আক্রমণ এবং শরণার্থী শিবিরে অগ্নিসংযোগ ঘটে। পরে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সাথে মুসলিম বা শরণার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটি এক ব্রিটিশ নাগরিক ও খ্রিস্টানের কাজ। এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে ইসলামোফোবিয়ার গভীরতা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
ইসলামোফোবিয়া কেবল সামাজিক বিদ্বেষ নয়। এটি ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, অভিবাসন নীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও প্রোথিত। এটি অধিকৃত ফিলিস্তিন, ভারতের মুসলমানদের অবস্থা, চীনে মসজিদের জবরদস্তিমূলক সংস্কার, ইউরোপে কুরআন পোড়ানো ও মিনারে নিষেধাজ্ঞার মতো ঘটনায় প্রতিফলিত হয়। ইসলামোফোবিয়া শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয়। বরং এটি বিশ্বজুড়ে জাতিগত-জাতীয়তাবাদীদের সংযোগ স্থাপন করে এবং বর্ণবাদ ও গণহত্যাকে সহায়তা করে।
ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ইসলামোফোবিয়ার একটি উদাহরণ, যা প্রমাণ করে যে অতি-ডানপন্থীদের উত্থান স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে না। গাজায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আর নির্ভরযোগ্য নয়। ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলায় আর আলোচনা যথেষ্ট নয়। বরং এখন কার্যকর পদক্ষেপের সময় এসেছে।
ইসলামোফোবিয়াকে বর্ণবাদের একটি রূপ হিসেবে বোঝার জন্য ব্যাপক জনশিক্ষার প্রয়োজন। মিথগুলো রয়ে গেছে যেমন ইসলামোফোবিয়া মুসলিম আচরণের প্রতিক্রিয়া বা ইসলামের প্রতি ভয় ন্যায়সঙ্গত। তবে ইসলামোফোবিয়া ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে নয়। বরং এটি মুসলিমত্বের প্রতীকগুলোর ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। এটি পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, বাসস্থান বা রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন অপরিহার্য। নাগরিক ও মানবাধিকার সংস্থা, মিডিয়া নেটওয়ার্ক, ট্রেড ইউনিয়ন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং সরকারগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট তৈরি করা সম্ভব। এই ধরনের জোট নীতিগত পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ইসলামোফোবিয়ার প্রসার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসলামোফোবিয়া শুধুমাত্র একটি মতাদর্শগত সমস্যা নয়। এটি একটি বাস্তব এবং কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ। একে মোকাবেলার জন্য জনশিক্ষা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। এই লড়াই ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার লড়াই, যা নিরপেক্ষতা ও উদাসীনতার ঊর্ধ্বে উঠে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি