আমরা সবাই জানি, আরব দেশগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য আছে। কিন্তু এটা আসলে ভণ্ডামি। ৪ মার্চ আরব লিগে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে মিসরের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের পক্ষে লবিং করেছিল বলে জানা গেছে। এটিই প্রমাণ করে, আরব দেশগুলোর ব্যর্থতা শুধু বিভেদ বা অদক্ষতার নয়, বরং একটি অন্ধকার রাজনৈতিক বাস্তবতা। যেখানে তাদের ঐক্যের অভ্যন্তরে আছে ভণ্ডামি, লোকদেখানো ভ্রাতৃত্বের কথা।
একই ঘটনা ঘটেছে রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) ক্ষেত্রেও। মাহমুদ আব্বাসের পিএ যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ দমন করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, হামাসকে প্রান্তিক করে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা। আর ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য ছাড়া এটি সম্ভব নয়। তাই পিএ-কে ‘দুর্বল’ বলা ভুল; কারণ, তাদের স্বার্থই আলাদা।
আরও কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের আগ্রাসনে ক্ষুব্ধ হলেও তাদের মূল চিন্তা হলো ইরানের প্রতি শত্রুতা, হুতিদের হিজবুল্লাহর উত্থানের ভয়, আঞ্চলিক অস্থিরতায় নিজেদের ক্ষমতা ও অস্বস্তি হুমকির মুখে পড়া। তাই তারা বরাবরই চুপচাপ এবং নিষ্ক্রিয়।
বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বাড়লেও আরব নেতৃত্ব ভয় পায়, রাজনৈতিক পরিবর্তন তাদের ক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না, ইসরায়েলের সমর্থন বা নিষ্ক্রিয়তা শেষ পর্যন্ত তাদের পতনই ডেকে আনতে পারে। তাই ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরব সরকারগুলোর ব্যর্থতা কেবল ঐক্যের অভাব নয়, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থা বদলাতে হলে ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সমর্থকদের আরব শাসকদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে, যারা নিজেদের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ইসরায়েলের সহিংসতাকে সমর্থন করছে।
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে অনূদিত,
মূল লেখক: ড. রামজি বারুদ (মার্কিন-আরব সাংবাদিক ও লেখক)