অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন।
নিউইয়র্ক সফরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল তাঁর নেতৃত্বে ছিলেন।
সফরকালে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতার রূপরেখা তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) পোস্ট দিয়ে এ সফরের ছয়টি উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেন।
গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতায় ড. ইউনূস বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সরকার প্রস্তুত। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে এমন এক প্রতিনিধিদল বিদেশ সফরে যাওয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ঐক্যের ইঙ্গিত বহন করে।
বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ
সফরকালে ড. ইউনূস ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্দি, ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা ও আইএমএফের এমডি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন এবং সেখানে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক নেতৃত্ব
সফরের একটি প্রধান বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট। ড. ইউনূস বাংলাদেশে থাকা প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার আশ্রয় ও সহায়তায় দেশের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন উদ্যোগের আহ্বান জানান। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা আদায় করেন।
এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ড. ইউনূস জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানান—দেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া বিষয়ে স্বাধীন মূল্যায়ন করার জন্য। এটি দেশের আত্মবিশ্বাসী ও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক পথচলার প্রতিফলন।
নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা
কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিদেশে কর্মসংস্থান ও শ্রম অভিবাসনের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স বাড়ার পাশাপাশি নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
সহযোগিতার ভবিষ্যৎ ভিশন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ড. ইউনূসের উপস্থিতি আবারও প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় দায়িত্বশীল অংশীদার হতে অঙ্গীকারবদ্ধ।