সক্রিয় অপরাধী চক্র, দমনের উপায় কী?

ইমরান , প্রকাশ:02 মার্চ 2025, 02:00 রাত
news-banner
দেশে রাজনৈতিক সরকার থাকুক আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থায় থাকুক আর শিথিল থাকুক। কথায় বলে চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনি। অপরাধী চক্র সব সময় ওৎ পেতে থাকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। আর সময় যখন রমজান তখন অপরাধী চক্রের তখন 'মৌসুম'।
বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যের তারতম্যের মধ্যেও মানুষ কেনাকাটা বেশি করে আর ব্যবসায়ীও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি টাকা লেনদেন করেন। আর অপরাধী চক্র এই মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ছাড়া জাল নোট তৈরির একটি প্রবণতা দেখা যায়। বর্তমানে তেমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। 

রমজান শুরু হওয়ার আগেই দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডেভিল হান্ট অপারেশন ছাড়াও বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চলছে ডেভিল হান্ট অপারেশন। গত ২০ দিনে সারাদেশ সারাদেশে ডেভিল হান্ট অপারেশনে ৩০ হাজারেরও বেশি জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আর ডিএমপিতে প্রতিদিন সাঁড়াশি অভিযানে দুই শতাধিক মানুষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপি শনিবার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে রয়েছে আটজন ডাকাত, ২৬ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ছয়জন চাঁদাবাজ, ২০ জন চোর, ১৬ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৩১ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী। এসময় ৩০০ রাউন্ড গুলি ও বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত তিনটি  চাকু, তিনটি সুইচ গিয়ার, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, জননিরাপত্তা বিধান ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে ডিএমপির ৫৮৬টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৬৫টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল টিমের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসির ১৪টি, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এর ১২টি এবং ডিএমপির সাথে র‌্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে।

এতো কিছুর পরে থেমে নেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। শুক্রবার রাতেও পাবনায় সড়কে গাছ ফেলে বাস-ট্রাকসহ অন্তত ৪০ গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রাত দেড়টার দিকে পাবনা-সাঁথিয়া সড়কের ছেচানিয়া ব্রিজের পাশে ঘটে এ ঘটনা।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়। সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও কয়েকটি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা ছাড়াও শুক্রবার রাতে মাদারীপুরে ডাকাতের গুলিতে নয়জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাতদল একটি ইটের ভাটায় আশ্রয় নিলে গ্রামবাসী ধরে সাত ডাকাতকে গণপিটুনি দেয়। এতে দুই ডাকাত নিহত ও পাঁচ ডাকাত গুরুতর আহত হন।

ডেভিল হান্ট, সাঁড়াশি অভিযান স্বত্বেও অপরাধ থেমে নেই। একটু রাত হলেও চলাচলে ভয় ধরছে দেশবাসীর। লাভলী শেখ নামে একজন দ্য নিউজকে জানান, রাত ৮টার পর যাতায়াত করতে খুব ভয় পাই। শুক্রবার রাতে স্বামীকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে যাই। কিন্তু রাতে ৮টার পর বাসায় ফেরার জন্য তৎপর হয়ে যাই। কারণ রাতে পথে ঘাটে চলতে ভয় করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাচ্ছে ডিবি। তাছাড়া ছোট-বড় যেকোনো অপরাধ ও অপরাধীর ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে ডিবি।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গুণগত মান বজায় রেখে এবং অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় ডিবি কাজ করে থাকে। আমাদের কাজে যেমন স্বকীয়তা রয়েছে, তেমনি নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমরা যেমন সাধারণ মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থল হতে চাই, তেমনি অপরাধীদের জন্য হতে চাই আতঙ্ক। সে মূলনীতি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ছোট অপরাধ বড় অপরাধের জন্ম দেয়। তাই যে কোনো অপরাধ ও অপরাধীর ক্ষেত্রে আমরা নিয়েছি জিরো টলারেন্স নীতি। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ডিবির নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সমাজকে মাদকের থাবা থেকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত পরিচালনা করা হচ্ছে মাদক বিরোধী অভিযান। চিহ্নিত সন্ত্রাসী হোক বা যেকোনো অপরাধীই হোক ডিবির জালে তাদের ধরা পড়তেই হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে এদেরকে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিবো না।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিককালে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছর ২০২৪ সালের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বা ৬৯ শতাংশ বেশি। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত ২০২৩ সালের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি বা ৭০ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪৫টি, যা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ৩৮২টি বা ৫০ শতাংশ বেশি।

মুল্যবান মন্তব্য করুন