আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস আজ ভরাট হয়ে মৃত্যুর মুখে খুলনার ১২ নদী

ইমরান , প্রকাশ:14 মার্চ 2025, 10:46 দুপুর
news-banner
বটিয়াঘাটা সেতুর নিচে এক সময় শোলমারী নদীর প্রশস্ততা ছিল প্রায় ৫০০ ফুট। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ ফুটে। তাও আবার ভাটার সময় পানিই থাকে না। জোয়ারের সময় পানি আসে, তখনও হেঁটে যাওয়া যায় এপার থেকে ওপারে। সেতুর পাশের পশ্চিম দিকে তিন কিলোমিটার দূরে জোয়ারের সময়ও পানি থাকে না।

শুধু শোলমারী নদীই নয়, পলি পড়ে নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খুলনার ১২ নদী। একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে ডুমুরিয়ার হামকুড়া। ভাটার সময় হেঁটে পার হওয়া যায় ডুমুরিয়ার ভদ্রা ও আপার সালতা নদী। সংকুচিত হয়ে গেছে তেরখাদার চিত্রা, পাইকগাছার শিবসা নদীর একাংশ, রূপসার আঠারোবেকী, কয়রার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, কয়রা, নগরীর ময়ূর ও ডুমুরিয়ার হরি নদী। বর্ষায় এসব নদী দিয়ে ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে পারে না আশপাশের এলাকার পানি।


এ বাস্তবতায় আজ শুক্রবার নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নদী, আমাদের ভবিষ্যৎ’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় নদী আছে ৫৮টি। এর মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়া ১২ নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬৯ কিলোমিটার। এক সময়ের খরস্রোতা শোলমারী নদীর অল্প কিছু অংশে জোয়ারের সময় কিছুটা পানি থাকলেও বাকি অংশ পরিণত হয় সরু খালে। নদীর ১৩ কিলোমিটার জুড়েই এ হাল। স্থানীয় কিছু লোক নদী থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। কেউ কেউ আবার নদীর জমিতে মাটি ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা করছে।


পলি পড়ে পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে ডুমুরিয়ার ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হামকুড়া নদী। নদীর বুকে বেশির ভাগ এলাকায় এখন চলছে চাষাবাদ। এ উপজেলার ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভদ্রা ও ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আপার সালতা নদী ২০১৫ সালের দিকে পুরো ভরাট হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভদ্রা ও আপার সালতা নদী খনন করা হয়। তবে ভদ্রা নদীর বুকে থাকা একাধিক বাঁধ তখন অপসারণ করা হয়নি। খননের দুই বছর পরই আবার ভরাট হয়ে যায়। নদীর বুকে কেউ চাষাবাদ করছে, কেউ কিছু অংশ দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছে।


ডুমুরিয়ার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হরি নদীও অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। জোয়ারের সময় এটিকে প্রশস্ত নদী মনে হলেও, ভাটার সময় পরিণত হয় খালে। নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। পলি পড়ে গভীরতা ও প্রশস্ততা কমেছে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসার আঠারোবেকী ও ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তেরখাদার চিত্রা নদীর। এ দুটি নদী এর আগে খনন করা হলেও তাতে তেমন সুফল মেলেনি। চিত্রা নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় ভুতিয়ার বিলে বছরজুড়েই রয়েছে জলাবদ্ধতা।

পাইকগাছা থানার সামনে ভাটার সময় গিয়ে দেখা যায়, শিবসা নদীর বুকে পানি নেই। নদীর দুই তীরে বেশ কিছু ট্রলার ও বার্জ-কার্গো বেঁধে রাখা হয়েছে। পূর্ণ জোয়ার হলে তখন নদীতে এগুলো চলাচল করবে। ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটির অন্তত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার জুড়েই এ অবস্থা।


একই হাল ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কয়রার কপোতাক্ষ, ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ শাকবাড়িয়া ও ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কয়রা নদীর। পলি পড়ে এ তিন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে অমাবস্যা-পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের সময় উঁচু জোয়ার হলে নদীর পানি তীর ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
নগরীসংলগ্ন ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়ূর নদীর অবস্থাও বেহাল। নগরীর অসংখ্য ড্রেনের নোংরা পানি ও ময়লা-আবর্জনা গিয়ে পড়ে এ নদীতে। এ ছাড়া গল্লামারী বাজারের সব ময়লা-আবর্জনাও নদীতে ফেলা হয়। পানি দূষিত হয়ে কালো হয়ে গেছে, প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ২০১৫ সালে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদী খনন করা হলেও মেলেনি সুফল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, কয়েকটি নদী খনন করা হলেও কাজ হয় নিম্নমানের। এ ছাড়া খননের পর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে তা তেমন কাজে আসেনি। তিনি বলেন, নদীগুলো একেবারে মরে গেলে তখন বিল ডাকাতিয়া, ভুতিয়ার বিলসহ কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, শোলমারী ও আপার সালতা নদী খননে একটি প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া নদী রক্ষায় একটি স্টাডি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে একটি পরামর্শক সংস্থা শিগগির মাঠ পর্যায়ে জরিপ শুরু করবে। জরিপ শেষে তারা যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী অন্যান্য নদী খনন করা হবে।

 

মুল্যবান মন্তব্য করুন