জাতির প্রয়োজনে একপথে হাঁটবো: ডা. শফিকুর রহমান

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:28 মে 2025, 08:02 রাত
news-banner

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ফ্যাসিবাদের চরম জুলুমের শিকার মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তিলাভ করেন।

বুধবার (২৮ মে ) সকালে শাহবাগ মোড়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে এটিএম আজহারুল ইসলামের জন্য সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম-এর সঞ্চালনায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিমউদ্দীন সরকার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতি সুলতান মহীউদ্দিন ও মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইউসুফ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শামিউল হক ফারুকি ও মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর, এটিএম আজহারুল ইসলামের ছেলে তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণ প্রমুখ।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আগেই বলেছি এটা কোনো সভা নয়। জাস্ট মজলুম ভাইয়ের, মজলুম নেতার প্রাথমিক অভিব্যক্তি প্রকাশের একটা আয়োজন। প্রচন্ড গরমে এখানে আপনারা হাজির হয়েছেন। মঞ্চে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন, আমাদের বন্ধু সংগঠনসমূহের সম্মানিত নেতৃবৃন্দ আছেন, ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আছেন, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আছেন এবং আপনারা আমরা সবাই আছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সম্মানিত এই ভাইয়ের বক্তব্য অচিরেই আরও বড় পরিসরে শুনব ইনশাল্লাহ। এই ঢাকাতেই শুনব ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমি আজকে আমার বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছি না। আমি শুধু আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করি যে মানুষটাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ঘাড়ের উপর মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়ে জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান রব তাঁকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আমাদের এই ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন সবাই। আল্লাহ যেন তাঁকে নেক হায়াত দারাজ করেন, তিনি যেন সুস্থ থাকেন এবং জাতির প্রয়োজনে তিনি যেন তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে পারেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, কিছুক্ষণ আগে এখানে বলা হয়েছে আমার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, আমি তা মোটেই মনে করি না। আমি মনে করি এ দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল ক্রেডিট আল্লাহ তায়ালাকে দেই। আর জমিনের এই ক্রেডিট এ দেশের জনগণকে দেয়ার পক্ষে। আমরা এক থাকব। জাতির প্রয়োজনে একপথে হাঁটবো এবং জাতির প্রয়োজনে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। সবাই ভাল থাকুন।

সদ্য কারামুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি একজন স্বাধীন নাগরিক।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমরা রাস্তা বন্ধ করে এখানে সমাবেশের আয়োজন করেছি; তাই জনগণের কষ্ট যাতে বেশি না হয়, এজন্য আমি সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলব। অবশ্যই আপনাদের সাথে আবারও দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে যিনি আসমান থেকে ফায়সালা করেছেন। এরপর আমাদের মহামান্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায় বিচার ছিলো না; আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশাকরি সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা আকাক্সক্ষা অনুযায়ী তাঁরা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।

তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার মামলায় যেসকল আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছিলো তাদেরকে। আমি যতদূর পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি অত্যন্ত সাবলীল ও সুন্দর যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে আমার মামলার অসাড়তা অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে সবকিছু প্রকাশ করতে পেরেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, এই মামলার মাধ্যমে আগের সরকার কীভাবে নির্মমভাবে আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যাকা-ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। আরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি; সেই ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদেরকে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাবো এই ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজকে যারা তাদের অতীতের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ছাত্রসমাজই রাজপথে নেমে রক্ত ঢেলে তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। যার কারণে ফ্যাসিস্টদের দর্প, গর্ব, অহঙ্কার চুরমার করে দিয়ে ছাত্রসমাজ আবার দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, ছাত্র-শিক্ষাক-যুবক সকল শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ এমনকি শিশু বাচ্চাদেরকেও। আমি দেখেছি তারাও রাজপথে নেমে এসেছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে যারা জনগণের পক্ষ নেয়ার কারণে আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি।

আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদেরকে যারা আল্লাহর ওয়াস্তে আমার মুক্তির জন্য নামাজ আদায় করেছেন, রোযা রেখেছেন, আবার অনেকে মানত করেছেন; তারা ইসলামী আন্দোলনকে মহব্বত করার কারণে এবং ইসলামকে ভালোবাসার কারণে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উত্তম জাযাহ দান করুন।

আমি স্মরণ করছি অত্যন্ত দুঃখ, বেদনা, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে যারা আমার নেতা ছিলেন তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, শহীদ কামারুজ্জামান, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও শহীদ মীর কাশেম আলীকে। আমি আরও স্মরণ করি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় যাদেরকে কারাগারে আটক রেখে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে; সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা আব্দুস সোবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং আব্দুল খালেক ম-লকে। সাথে সাথে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও স্মরণ করি যাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। আরও স্মরণ করি সাবেক আমীর জনাব মকবুল আহমদ ও নায়েবে আমীর অধ্যাপক একেএম নাযির আহমদকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের শাহাদাত কবুল করুন আমীন। এ সকল ভাইদের শোক-সন্তপ্ত, পরিবার পরিজনের প্রতি আমি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, যারাই এসব হত্যাকান্ডের সাথে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আমার কী অপরাধ ছিলো! আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখাই কী আমার অপরাধ ছিলো? আজ আল্লাহর রহমতে আমীরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝুলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আমার জীবন থাকতে, একফোঁটা রক্ত থাকতে আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য শহীদ হতে পারি সেই তাওফিক আল্লাহর কাছে চাই। মনে রাখবেন আমাদের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আজ হোক, কাল হোক মৃত্যুবরণ তো করতেই হবে। আমরা কেউ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবো না। আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই, আমাকে প্রায়ই বলতেন, ‘আজহার ভাই, আমরা যে পরিমাণ গুনাহগার, তাতে জান্নাত পাব না। জান্নাত পাওয়ার একটাই মাত্র পথ আমাদের শাহাদাত বরণ করা। এই শাহাদাতই আমাদেরকে জান্নাত দিতে পারে।’ তাই যে দল, যে জাতি, যে ব্যক্তি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে এগিয়ে যায়, সেই দল সেই জাতিকে কেউ দমাতে পারে না।

তিনি বলেন, আপনাদের সকলের মাধ্যমে বাংলাদেশের আপামর জনগণের কাছে আহ্বান করতে চাই, এই দেশ আমাদের, এই দেশ আমাদের সবার। এই দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী এই দেশটাকে গড়ার জন্য আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। অবশ্যই আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার আর পাওয়ার কিছুই নেই। আমরা যদি দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারি এটাই আমার একমাত্র পাওয়া, আর কোন পাওয়ার নেই। যেখান থেকে যে ভূমিকা রাখা দরকার সেখান থেকে সেই ভূমিকা রাখবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমি আমার সংক্ষিপ্ত কথা শেষ করলাম।

মুল্যবান মন্তব্য করুন