কী করবে বিএনপি! চাওয়ার সাথে পাওয়ার অমিল

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:10 জুন 2025, 04:24 সকাল
news-banner

আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো দিন সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস । গত শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারেনি, বরং তাদের চাওয়া প্রাধান্য দেয় ড মুহাম্মদ ইউনুস। তাদের ও জনগণের চাওয়া ডিসেম্বরকে উপেক্ষা সরকার এমন অভিযোগ দলটির। চাওয়ার সাথে পাওয়ার অমিল, এখন কি করবে বিএনপি? এমন রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এদিক, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনী রোডম্যাপে সন্তুষ্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চ, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিবাচক হিসেবে দেখছে নির্বাচনী এ রোডম্যাপকে।

একটি সূত্র জানায়, বিএনপি চাওয়া ছিলো নির্বাচনী স্পষ্ট রোডম্যাপ, সেটি তারা পেয়েছে। এখন বিএনপি এগোবে নির্বাচন কমিশন কবে তফসিল ঘোষণা করবে, সেটিকে স্পষ্ট করতে আবার সরকারকে চাপ দেবে।

বিএনপির অভিযোগ, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ২ ও ৩ জুন বৈঠক হয় অন্তর্বর্তী সরকারের। এ বৈঠকে বিএনপিসহ ৫০ অধিক দল ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের জন্য যোক্তিকভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছি। বিষয়টি আমলে নেয়নি সরকার।

"বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিলো। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এপ্রিলের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে বিএনপিসহ জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে" দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বিএনপির দাবি, প্রধান উপদেষ্টা এমন সময়ে নির্বাচনের আয়োজনের কথা বলেছে ওই সময়ে অনেকগুলো পাবলিক পরীক্ষা থাকে, আবহাওয়া সঠিক থাকে না। আমাদের জানামতে ফেব্রুয়ারির ১৬ অথবা ১৮ তারিখের দিকে পবিত্র রমজান শুরু হবে। তাহলে ঈদ হবে মার্চের মাসে শেষার্ধে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণা ক্যাম্পেইনের জন্য যে ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন। সেটা তাহলে রমজানের মধ্য পড়ে যাবে। এটা একটা অযোক্তিক সময়। দ্বিতীয়ত, ওই সময় এইচএসসি ও এসএসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে খুব বেশি হলে জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারতো। হয়তো এটা কি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতো। কিন্তু তিনি সেটা আমলে নেয়নি। এছাড়া এপ্রিলে নির্বাচন হলে একমাসের মধ্য পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যা অনেক কঠিন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার নির্বাচনী ঘোষণা নিয়ে আমাদের দল বলেছে, এপ্রিল মাস নির্বাচনের করার উপযুক্ত সময় নয়। সরকার প্রধান কেন এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন, সেটি তিনিও স্পষ্ট ধারণা দেননি। দলের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে এবং ৫০ অধিক দলের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে, আলোচনার পথ খোলা থাকবে। যদি তাতে না হয় তবে পরিস্থিতি বলে দেবে, কী করা যাবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নয়া দিগন্তকে বলেন, অমিল আছে বলেই আমরা মিল খুঁজি। যেটা অমিল দেখছেন, আলোচনার মাধ্যমে তো মিলও হতে পারে। আমরা তো মিল রেখেই সরকারকে সহযোগিতা করছি। যদি মিল না হয় এম এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল না হলে কি হবে, এটা প্রেডিকশন, বলা ঠিক হবে কি? সময় বলে দিবে তখন কি হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে শুধু আমরা নই, গোটা জাতি হতাশ হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের পার্টির অফিসিয়ালি যে সিদ্ধান্ত সেটি পরে জানানো হবে'।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলে এসেছি দ্রুত নির্বাচন চাই। এটাই আমরা আশা করেছিলাম, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এ নির্বাচনী রোডম্যাপ নিঃসন্দেহে শুধু আমরা নই, গোটা জাতি হতাশ হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সময়ে (এপ্রিল) প্রচণ্ড গরম, ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রমজানের পরপরই এবং পাবলিক পরীক্ষা আছে। সূতরাং এই সময়টা খুব চিন্তা করে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারণা করতে হবে রমজান মাসে, এটা খুব ডিফিকাল্ট হবে। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া সম্ভব এবং সেটা জাতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে।

গত শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণায় রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এক বিবৃতিতে বৈঠকের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শংকিত হতে পারে। সভায় প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে সময়সীমা প্রস্তাব করেছেন তা পর্যালোচনা করে সভা মনে করে যে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অধিকন্তু কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ তাঁর ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রায় দেড় যুগ ধরে মৌলিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য গুম, খুন, জেল-জুলুম, আহত ও নির্যাতিত হয়েও অব্যহত লড়াই চালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার বিজয় অর্জিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বিধায়, এই সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে স্থায়ী কমিটির সভা।

বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করেছেন। পঙ্কিল বাতাস অর্ন্তবর্তী সরকারের শরীরেও লাগছে কি না। এটি মানুষের কাছে বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কেন দু’একজন লোকের কথায় বা দু’একটি রাজনৈতিক দলের কথায় প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন। এপ্রিল মাসে তো প্রচণ্ড খরতাপ থাকে, ঝড় বৃষ্টি হয়, এসএসসিহ পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা থাকে। সে সময় কেবল রোজার ঈদ শেষ হবে। এপ্রিলে নির্বাচন হলে রমজানে প্রচারণা চালাতে হবে। রোজা রেখে প্রচারণা চালাবে কিভাবে। মানুষ রোজা রাখবে না নির্বাচনের প্রচারণা করবে। এপ্রিলে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এটি অর্বাচীনের মতো কাজ, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত বরে জনগণ মনে করে।

মুল্যবান মন্তব্য করুন