
বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৫০ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন
বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক)-এর কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দায়ের করা হাজারও মামলার মধ্যে ৪৫০ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আবেদনকারীদের অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
এ মুহূর্তে আড়াইশো মামলা প্রত্যাহার যোগ্য বলে পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) দপ্তর থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মতামত পাঠানোর সুযোগ থাকায় প্রত্যাহারযোগ্য মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে প্রত্যাহারযোগ্য মামলার সংখ্যা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, মূলত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এক এগারো (২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি) থেকে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। যদিও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেলা এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কমিটি গঠন এবং কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি নীতিমালা জারি করে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রত্যেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে। জেলা পর্যায়ের ৪ সদস্যের কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সভাপতি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যারা মামলা প্রত্যাহার চান, তাদেরকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে এজাহার এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চার্জশিটের সার্টিফাইড কপিসহ আবেদন করতে হবে।
প্রাপ্ত আবেদনগুলোর বিষয়ে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত চাইতে হবে। পাবলিক প্রসিকিউটরকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মতামত পাঠাতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনগুলো জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন। কমিটির কাছে কোনো মামলা রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, তবে তা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবেদন প্রাপ্তির ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে মামলার তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম খায়রুল বাশার, শহীদ উন নবী সালাম এবং জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, নায়েবে আমির মাওলানা আলমগীর হোসেন, শহর আমির আবিদুর রহমান সোহেলসহ অন্যরা জানান, একেক জনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দেড়শো পর্যন্ত মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার।
বগুড়া জেলা জজ আদালতের জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ জানান, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর শাসনামলে রাজনৈতিক কারণে কমপক্ষে সাড়ে ৭০০ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। প্রত্যেক মামলায় গড়ে ৪৫ জন করে আসামি রয়েছে। সে হিসেবে ৭৫০টি মামলায় বিএনপিসহ তৎকালীন বিরোধীদলের প্রায় ৩৪ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় নেওয়ার পর ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বহু মামলা করা হয়েছে। সেগুলোকে গণনায় নিলে মামলা এবং আসামির সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। আশা করা যায়, যাচাই-বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে প্রত্যাহারের যোগ্য সকল মিথ্যা মামলার তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।