
বুধবার থেকে চালু হয়ে গেল চীনের পণ্যের উপর ১০৪ শতাংশ হারে মার্কিন আমদানি শুল্ক। অর্থাৎ চীনের সামগ্রী আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করার আগে ওই দেশের সরকারকে ১০৪ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। পাল্টা মার্কিন পণ্যে চীনও সমহারে শুল্ক আদায় করবে বুধবার থেকেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় এশিয়ার শেয়ার বাজারে নতুন করে ধস নামতে শুরু করেছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনড়। শুল্ক নীতি সংশোধনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন তিনি।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প নয়া শুল্ক নীতি চালুর পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মুখের উপর জবাব দিয়ে আমেরিকার পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছে চীন। জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর জবাবে বেজিং পাল্টা বলেছে, চোখ রাঙিয়ে তাদের দমিয়ে দেয়া যাবে না। তারা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়বে।
চীন যখন সঙ্ঘাতের রাস্তায় হাঁটছে, তখন ভারত-সহ বেশিরভাগ দেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে নিতে আগ্রহী। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল একের পর এক দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে মুখোমুখি বৈঠকের আর্জি জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় মোকাবিলায় ভারতকে পাশে চেয়ে বার্তা দিয়েছে চীন। নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র সু জিং এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে বলেছেন, বাণিজ্য এবং শুল্ক যুদ্ধে কোনো পক্ষই বিজয়ী হয় না। সব দেশকেই নিজেদের মধ্যে লাগাতার আলোচনার নীতি অনুসরণ করতে হবে। চর্চা করতে হবে প্রকৃত বহু-পাক্ষিকতার। একতরফা নীতি আরোপের সব ধরনের চেষ্টার বিরুদ্ধে একসাথে প্রতিরোধ গড়তে হবে।
চীনা মুখপাত্র আরো বলেছেন, চীন-ভারত অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরিপূরকতা এবং পারস্পরিক উপকারিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শুল্কের অপব্যবহার শুরু করেছে, তা পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর উন্নয়নের অধিকার কেড়ে নেবে। এই পরিস্থিতিতে দু’টি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশের উচিত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সমস্যাগুলো অতিক্রম করা উচিত।
শি জিং বলেছেন, চীনের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। চীনের উৎপাদন ব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ এবং ক্রমাগত উন্নত হতে থাকা শিল্প প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। চীন গবেষণা ও উন্নয়নে শক্তিশালী বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের উপর জোর দেয়। চীনা মুখপাত্র বলেছেন, তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বহু-পাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যাবে।
চীনের মুখপাত্রের বক্তব্য নিয়ে নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের সাথে বোঝাপড়ার রাস্তায় হাঁটলেও চীনের প্রস্তাব নিয়ে নয়াদিল্লি অবস্থান জানাবে। গত ১ এপ্রিল থেকে ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে। দু-দেশই এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। এই সুযোগে চীন দেখাতে চাইছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা একা নয়।
সূত্র : দ্য ওয়াল