
যৌন পেশাকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবির অপচেষ্টাকে সকল ধর্মের বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন : বিতর্ক ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকের বক্তারা।
আজ ৭ মে সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের - আইআরডি আয়োজনে এই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মানারাত ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব। গোলটেবিল বৈঠকটি উপস্থাপনা করেন ড. আবদুল মান্নান।
বক্তারা প্রস্তাবিত নারী কমিশনের প্রস্তাবিত রিপোর্টের বিভিন্ন অসঙ্গতি এবং বিতর্কিত অধ্যায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে যৌন পেশাকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবির অপচেষ্টাকে সকল ধর্মের বিরোধী বলে অভিহিত করেন বক্তারা।
গোল টেবিল বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী আরা খানম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, আইপাস বাংলাদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. শামিলা নাহার, অ্যাডভোকেট সাবিকুন নাহার মুন্নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক আরিফুর রহমান অপু, শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শামীমা তাসনীম, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, আয়নাঘরে দীর্ঘদিন নির্যাতিত লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি হাসিনা মমতাজ মারিয়া, মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মো. সাইফুল্লাহ, মানারাত ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম আবদুল হান্নান, বুয়েটের ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস এবং সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগরী জামায়াতের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রতিবেদনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান পারিবারিক আইনের সংস্কার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব আইনের পরিবর্তে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীর জন্য বিয়ে, তালাক ও সন্তানের ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশের পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের জন্য আইনটিকে ঐচ্ছিক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে সম্পদে নারীর ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ গোল টেবিল বৈঠকের বিষয়বস্তুর আলোচনা ও বক্তাদের বক্তব্যের বিষয়সহ নারী কমিশনের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সার্বিক মূল্যায়ন করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কমিশনের এসব সুপারিশ নিয়ে পালটাপালটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এসব সুপারিশে আপত্তি জানিয়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের আহবান জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীকে সমান অধিকার, উত্তরাধিকার আইনে সমান অধিকার এবং শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা একবারে অযৌক্তিক।
গোল টেবিল বৈঠকে শেষে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, নারী কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতিবেদন নারী-পুরুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ। পতিতাবৃত্তির কুপ্রভাব নিয়ে বহুমুখী বিশ্লেষণ করে বক্তব্য দেন তিনি। যার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অভিপ্রায়ে নারী কমিশন উল্লেখ করেছে। তিনি এই জাতি বিনাশী প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।