site-logo

www.bdedition.com

(অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল)

জাতীয়
সংস্কারে প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকা
প্রকাশিত: বিডি এডিশন ডেস্ক 27 জানুয়ারী 2025, 07:22 বিকাল
news-banner
ভবনের টেলিফোন ও আইটি নেটওয়ার্ক নতুন করে সাজাতে হবে। অধিবেশন কক্ষসহ ভবনের সাউন্ড সিস্টেমও নতুন করে চালু করতে হবে।
বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্যও প্রয়োজন হবে নতুন নতুন সরঞ্জাম। এরপর রয়েছে দরজা-জানালা ও বিভিন্ন দপ্তর মেরামত এবং আসবাব ক্রয়। সরকারের কাছ থেকে বাজেট বরাদ্দ পেলে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংস্কারে প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকাসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা।


এ সময় তারা স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপদের কক্ষসহ ৯ তলা ভবনের প্রায় সব কক্ষ তছনছ করে। সংসদ এলাকায় অবস্থিত মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কার্যালয়, সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কর্মকর্তাদের অফিসের চেয়ার-টেবিল, তাঁদের বাসভবনও ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়। এ সময় সুযোগসন্ধানীরা কম্পিউটার, এসি, আসবাব প্রভৃতি লুট করে নেয়। এমনকি বাথরুমের বালতি, বদনা পর্যন্ত নিয়ে যায়।

খুলে নিয়ে যায় বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ও সাউন্ড সিস্টেম। ফলে পুরো সংসদ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভাঙচুরের পর সচিবালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ঘটনার দুই দিন পর সংসদ সচিব সংসদ ভবনের বাইরে মন্ত্রী হোস্টেলে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। তারপর কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ১৮ আগস্ট থেকে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস শুরু করেন।

তবে এখনো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। লুট হওয়া মালপত্র কিছু পাওয়া গেলেও বেশির ভাগই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক মালাপত্র কেনাকাটার প্রয়োজন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদ সচিবালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে এরই মধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুরো সংসদ ভবন মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বড় কাজ রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের। এরপর সংসদ সচিবালয়ের আইটি খাতের। বাকিটা সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো করবে। কিন্তু সংসদ সচিবালয়ে এই মুহূর্তে বাজেট নেই। অধিবেশন না থাকায় বেতন-ভাতার বাইরে চলতি অর্থবছরের বাজেটের বড় অংশই ফেরত নেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন বাজেটের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ ভবনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত সচিব জেবুন্নেসা করিমের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জানানো হয়, সংসদ ভবনে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সরকারি ও ব্যক্তিগত তহবিলসহ প্রায় ৯০ লাখ টাকা লুট হয়েছে। সভায় সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অফিস থেকে হারিয়ে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের বিস্তারিত তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ নভেম্বর আইটি খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করতে সংসদ সচিবালয় থেকে সহকারী মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কুমার সিকদার সব উইং প্রধান বরাবর চিঠি পাঠান। অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ ও ভবন সংস্কারসহ অন্যান্য বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর সংসদের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয় গঠিত কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ পেশ করেছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ ভবনের ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত প্লেট, এসি, স্ট্যান্ড ফ্যান পরিবর্তন ও মেরামতের জন্য ২১৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নবম তলার সাব-স্টেশন, এমপি রুম, রিসেপশন, ওয়েটিং রুম, গণপূর্ত সার্কেল অফিসসহ মসজিদসংলগ্ন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অফিসের বৈদ্যুতিক কাজের জন্য ৯০ লাখ টাকা খরচ হবে। বিভিন্ন ব্লকের মেইন সার্ভিস লাইন, সুইচ, সকেট, পয়েন্ট ওয়্যারিং, এলইডি লাইট, টিউব লাইট, সার্কিট ব্রেকার সরবরাহ ও সংস্কারে তিন কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া রাস্তা, মাঠ, গেট, লেক, সিকিউরিটি লাইট, ফোকাস লাইট, স্ট্রিট লাইট, গার্ডেন লাইট, সার্ভিস লাইন, সার্কিট ব্রেকার সংস্কারে তিন কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং সিকিউরিটি গেট, পোস্টের মেটাল গেট ও গার্ডেনের বৈদ্যুতিক সংস্কারের জন্য ৮৭ লাখ টাকা খরচ হবে। বিভিন্ন ব্লকের লিফটের যন্ত্রাংশ এবং এডিআর, সড়কবাতি ও ফ্লাড লাইট, সিসিটিভি পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক বৈদ্যুতিক কাজের জন্য দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

প্রস্তাবিত বরাদ্দে সংসদ ভবনের সচিব হোস্টেল, এলডি হল, মেডিক্যাল সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, টিডি স্টুডিও, ব্যাংকের বৈদ্যুতিক সংস্কারের জন্য চার কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ভবনের এনএসি, এইচসি বাসা, সচিব ও যুগ্ম সচিব হোস্টেল ও কর্মচারী কোয়ার্টারের বাসার বৈদ্যুতিক স্থাপনার মেরামত ও বৈদ্যুতিক কাজের জন্য তিন কোটি ৭৬ লাখ টাকা লাগবে। ভবনের গেট নম্বর ১, ৬, ৭, ১২-এর জন্য স্ক্যানার, আর্চওয়েসহ অন্যান্য সিকিউরিটি ডিভাইসের বৈদ্যুতিক সংস্কারে ছয় কোটি ১১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।

প্ল্যানারি হলের ক্ষতিগ্রস্ত কনফারেন্স সিস্টেম পরিবর্তন এবং বিভিন্ন কমিটি কক্ষের কনফারেন্স সিস্টেম পরিবর্তনে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে। ভবনের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, উচ্চমান আবাসিক ভবনের ১০টি বাসার ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক স্থাপনা মেরামতের জন্য দুই কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং এমপি হোস্টেলের ১৯২টি রুমের বৈদ্যুতিক সংস্কারের জন্য ছয় কোটি ৮৩ লাখ টাকা লাগবে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ নতুন করে দিতে হবে। বরাদ্দ অনুমোদন হলে কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।