
খবর পেয়ে খুলশী থানা-পুলিশের সদস্যরা গিয়ে হাজির হন সেখানে। ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন থানায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, তাঁদের কেউ সাবেক ব্যাংকার, কেউ বালু সরবরাহকারী আর কেউ জমি বেচাকেনায় জড়িত। গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কোটি টাকার সন্ধানে যাওয়ার তথ্য জানতে পারে।
গত শুক্রবার রাতে নগরের খুলশী এলাকার একটি বহুতল ভবনের আটতলায় এই ডাকাতির চেষ্টা হয়। এ ঘটনায় যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তার ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে পুলিশ। গ্রেপ্তার ১২ জন হলেন মো. ওয়াজেদ রাকিব (৩৬), মো. হোসাইন (৪২), মো. রোকন (৩৯), মো. ওসমান (৪০), রুবেল হোসেন (২৫), মহি উদ্দিন (৪৫), আবদুস সবুর (৩৭), মো. ইয়াকুব (৩৫), মোজাহের আলম (৫৫), হারুন অর রশিদ (৩৬), আবদুল মান্নান (৩৫) ও শওকত আকবর (২৮)।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. জাহাংগীর আলম প্রথম আলোকে নিজ কার্যালয়ে বলেন, গ্রেপ্তার ১২ জনকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যমুন অয়েলের সাবেক কর্মকর্তার বাসায় ৫৯০ কোটি টাকার তথ্য পেয়ে তাঁরা সেখান থেকে টাকাগুলোর জন্য গিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা ২০টি বস্তাও নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাকাত দলের পরিকল্পনায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, পেশায় বালু সরবরাহকারী ওয়াজেদ রাকিব পুরো ঘটনার পরিকল্পনাকারী। ৭ জানুয়ারি ওয়াজেদ জানতে পারেন, যমুনা অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর বাসায় ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ একজনের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন। ওয়াজেদ বিষয়টি মো. মালিক ও ওয়াসিমের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে তাঁরা হোসাইনকে যুক্ত করেন। হোসাইন তাঁর পরিচিত বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করেন। তাঁরা তিনজনই জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। পরিকল্পনামতো হোসাইন তাঁর পরিচিত একটি বাহিনীর একজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেই ব্যক্তি মিরসরাইয়ের আলম ও শওকতকে ঠিক করে দেন। এরপর দফায় দফায় তাঁরা নগরের হালিশহরে বৈঠক করেন। আলমই খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকিগুলো সংগ্রহ করেন। আলম সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) নকল পরিচয়পত্রগুলো তৈরি করেন আলম। তাঁদের মধ্যে মহি উদ্দিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।
পরিকল্পনামতো গত শুক্রবার দুটি মাইক্রোবাসে করে ২০ জনের দল নগরের খুলশী এলাকায় যমুনা অয়েলের সাবেক কর্মকর্তার ফ্ল্যাটে যান। ওই সময় তাঁরা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দেন। বাসার নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে রেখে ফ্ল্যাটে ঢোকেন। ওই সময় যমুনা অয়েলের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাসায় ছিলেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মূলত বাসা ফাঁকা কোন দিন ছিল, তা আগে থেকেই তথ্য নিয়েছিলেন ডাকাতির চেষ্টায় জড়িতরা।
পুলিশ জানায়, তিনটি ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্স বাসা তৈরি করেছেন গিয়াস উদ্দিন। পাঁচ কক্ষের এ বাসায় প্রতিটি কক্ষ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট লক করা। ছয়–সাত মাস আগে সপরিবার বাসায় ওঠেন গিয়াস। তাঁর ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। মেয়ে জামালখানের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। আটতলার ফ্ল্যাট দিয়ে প্রবেশ করে নয়তলায় যাওয়া যায় অনায়াসে। নয়তলার তিনটি কক্ষ ও আটতলার দুটি কক্ষের দরজায় ডিজিটাল লক লাগানো। প্রতিটি লক খুলতে ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রয়োজন হয়। ডাকাত দল আটতলার মূল দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে নয়তলায় উঠে দুটি কক্ষের ডিজিটাল ফিঙ্গার লক ভাঙার চেষ্টা করে।
বাসায় ৫৯০ কোটি টাকা প্রসঙ্গে জানতে যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর মুঠোফোনে কল করা হলে রিং হলেও তিনি না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ডাকাতদল ফ্ল্যাটটি থেকে কোনো টাকা নিতে পারেনি। ফ্ল্যাটমালিক তাঁদেরকে জানিয়েছেন, খরচের জন্য বাসায় দুই লাখ টাকা রেখেছিলেন।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত দলের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ওয়াকিটকিও উদ্ধার হয়েছে। তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের কাল আদালতে হাজির করা হবে।