
আওয়ামী লীগের পতনের পর গুলিস্তান এলাকায় তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। এর পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে এটি ছিল পরিত্যক্ত ভবন। এক বছরে এটি ভাসমান মানুষের সৌচাগার ও নেশার আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। মানুষজন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এমন অবস্থা হয়েছে যে উৎকট গন্ধে আশপাশে টেকা দায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রায় বছর পর তা এখন সংস্কার হচ্ছে। পরিত্যক্ত ভবনে টাঙানো হয়েছে একটি লাল ব্যানার, এতে লেখা আছে, ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় এর মেরামত কাজ চলছে। ভবনের সামনে থাকা কয়েকজন জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের নামে এটি গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট কার্যালয় হবে।
তবে পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিতের ভাষ্য, এখানে ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে হলে দেখতে পারবেন সবকিছু।
তবে এ ধরনের কোনো ইনস্টিটিউট করার বিষয়ে সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
একজন শ্রমিক বলেন, গত বুধবার থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ময়লা-আর্বজনা আমরা এখান থেকে সরিয়ে নিতে পারব।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সড়ক, স্থাপনার নাম পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মার্চ মাসে বদলে ফেলা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম। সড়কটির নতুন নাম হয়েছে শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ।
মে মাসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব ধরনের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অন্তর্বর্তী আন্তর্বর্তী সরকার। দল হিসেবে নিবন্ধনও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ফলে ছয় মেয়াদে দুই যুগের বেশি সময় সরকারে থাকা দেশের অন্যতম প্রাচীন এ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পরে গুলিস্তানে পরিত্যক্ত বিভিন্ন বাড়ি খালি পড়ে ছিল। এসব ভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় হয়। তারই একটি তখনকার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ঠিকানার এই পুরনো ভবন, যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ১৯৮১ সাল থেকে। পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় ২০১৬ সালে, ২০১৮ সালে ১০ তলা ভবন তৈরি করা হয়।
আট কাঠা জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়েছিল আশির দশকে। পরে এই জমিতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করে এটিকে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২০১৮ সালের ২৩ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিনই এই ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে সব কিছু নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকে ভবনটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থতলা থেকে ওপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের চতুর্থ ও পঞ্চমতলায় সাজানো হয়েছিল দলের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠতলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তমতলা বরাদ্দ দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য। অষ্টমতলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। নবমতলা ছিল দলের সভানেত্রীর জন্য। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়। দশমতলায় ছিল ক্যাফেটেরিয়া।