site-logo

www.bdedition.com

(অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল)

জাতীয়
জুলাইয়ের শহীদদের খুনিদের বিচার আমাদের কাছে আমানত : প্রেস সচিব
প্রকাশিত: 11 আগস্ট 2025, 03:13 রাত
জুলাইয়ের শহীদদের খুনিদের বিচার আমাদের কাছে আমানত : প্রেস সচিব
news-banner

গণঅভ্যুত্থানে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার সাথে জড়িত প্রত্যেকটা খুনির বিচার করবেন বলে জানিয়েছেন অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমরা ধৈর্য ধরে প্রত্যেকটা খুনিকে বিচারের মুখোমুখি করবো, একটাও বাদ যাবে না। এটা আন্তর্জাতিক স্ট্যার্ড (নিয়ম) মেপে করা হবে। কেউ যেন বলতে না পারে, যে আমরা নিয়ম না মেপে অবিচার করেছি।’

তিনি বলেন, জুলাইয়ের শহীদদের খুনিদের বিচার আমাদের কাছে আমানত।

রোববার (১০ আগস্ট) সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের সমাপনীতে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে সময় দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪টি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে। ১৮টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ন্যয়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে একটু সময় দিতে হবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায়-অবিচার করি, তাহলে সেটি নিয়ে বাহিরে কথা হবে, যে উনারা জোর করে ফাঁসি দিচ্ছেন। এটা চাই না।’

Manarat-University-02

শফিকুল আলম বলেন, শহীদরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছে, অনেস্টলি আমরা সেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকে বলেন যে আমাদের কাজ স্লো হচ্ছে বা কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে না। আমরা বলব যে আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যতটুকু করার দরকার সেটাই আমরা করছি। এবং সেটার জন্য অনেক ক্ষেত্রে একটু দেরিতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা সত্যিকার অর্থে আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই ডিলেটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে যে, যখন আমরা ক্ষমতা নিলাম তখন একটা প্রশ্ন উঠেছিল যে, যারা শহীদ হলেন এই ইনভেস্টিগেশনটা কে করবে? এই ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্বে অনেকে বলছেন যে আমরা নিজেরাই করব। প্রফেসর ইউনুস বললেন, না আমরা ইউএনকে ডাকি। ইউনাইটেড নেশনের হিউম্যান রাইটসের অফিসকে ডাকি, তারা এসে এটা ইনভেস্টিগেট করুক। উনারা এসে চার-পাঁচ মাস ধরে ইনভেস্টিগেট করলেন, করে এখন দেখেন তাদের ইনভেস্টিগেশনের কারণে আজকে খুনি হাসিনার চেহারা সবার কাছে প্রকাশিত। আমরা যদি নিজেরা করতে যেতাম তাহলে খুনি আর খুনির দোসররা সারাক্ষণ বলতো যে এটা মোটিভেটেড হয়েছে, এটা ঠিক কাজ হয়নি, এটার মধ্যে চক্র ঢুকে গেছে এবং ওরা সে অনুযায়ী মিলিয়নস অফ ডলার খরচ করে পুরো পৃথিবীবাসীকে জানাতো যে এটা একপক্ষীয় একটা ইনভেস্টিগেশন হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে আপনাকে একটু সময় দিতে হবে, আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায় অবিচার করি ফেলি, এটা নিয়ে বাইরে আরো কথা উঠবে যে উনারা এটা জোর করে উনাকে ফাঁসি দিচ্ছেন, জোর করে উনার প্রতি অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমরা এটা চাই না। আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমরা ধৈর্য ধরে প্রত্যেকটা খুনিকে আমরা বিচারের সম্মুখীন করব একটাও বাদ যাবে না এবং এটা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডটা মেপে করা হবে। কেউ বলবে না যে না আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মাপি না। যাতে কেউ না বলতে পারে এসে যে- তুমি ওদের প্রতি অন্যায় অবিচার করেছ। প্রত্যেকটা নিয়ম মেনে হবে এবং যাদেরকে এই গভমেন্ট নিয়ে এসেছেন যারা প্রসিকিউশন করেছেন তারা এই কাজগুলো খুব ভালো জানে।

Manarat-University-03

অতীতে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসিয়ে বহুজনকে ফাঁসি দেয়ার ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমরা বিদেশী কনসাল্ট্যান্ট রেখেছি যাতে কেউ না বলতে পারে যে উনারা এসে একটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট সেটআপ করেছে। আপনারা জানেন আমাদের হিস্ট্রি আছে ক্যাঙ্গারু কোর্ট করার। এবং কতজনকে তারা ফাঁসিতে দিয়েছেন ক্যাঙ্গারু রিপোর্ট করে, আমরা চাই না বাংলাদেশে এই ধরনের ক্যাঙ্গারু রিপোর্ট হোক। আপনারা ধৈর্য ধরেন প্রত্যেকটা খুনির বিচার হবে, কেউ বাদ যাবে না। শাকিল পারবেজকে যারা খুন করেছে, প্রত্যেককে আইডেন্টিফাই করা হবে প্রত্যেকের বিচার হবে। এটা আমাদের শহীদদের সাথে ওয়াদা। এই ওয়াদার যাতে আমরা বিচ্যুত না হই। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এটা খুবই একটা আমানত। তারা আমাদেরকে একটা আমানত দিয়েছেন। এই আমানতের থেকে যেন আমরা খেয়ানত না করি। আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এর খেয়ানত করলে। আমরা চাই সুখী সমৃদ্ধ একটা বাংলাদেশ হোক।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা সমস্ত মানুষের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য কাজ করছি। আমাদের ডেমোক্রেটিক ট্রান্জিশন আসছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ইলেকশন আসছে। আপনারা দোয়া করবেন যাতে শহীদদের যে আশা সেটি পূরণ হয়। তারা ভোটের জন্য শহীদ হয়েছেন, মানুষের অধিকারের জন্য শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের থেকে রাজতন্ত্র খতমের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমরা শেখ পরিবারের দাস-দাসী ছিলাম। সেখান থেকে তারা আমাদেরকে মুক্ত করে একটা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি করার জন্য তারা শহীদ হয়েছেন। আত্মদান করেছেন।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জুলাই যোদ্ধা আবু সাদেক কায়েম অভিযোগ করেন, এক বছর পরও বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি।

তিনি বলেন, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতির। শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও সম্মান প্রদানে গ্যাপ রয়েছে। যাদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

আবু সাদেক কায়েম আরো বলেন, বাংলাদেশে আর দিল্লির দাদাগিরি চলবে না। খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। পুলিশ সংস্কার, মিডিয়া সংস্কার এবং শক্তিশালী স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে। বাংলাদেশের ক্ষমতা যারই হাতে থাকুক না কেন, জাতীয় স্বার্থে আমাদের ন্যূনতম ঐকমত্য থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশেষ অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: মতিউর রহমান আকন্দ।

দিনব্যাপী কর্মসূচি বেলা ১১টায় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের নামে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়। উদ্বোধন করেন শহীদের বাবা বেলায়েত হোসেন। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করবেন তার মা আসিয়া খাতুন। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে দুই শহীদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

দুপুর ১২টায় শুরু হয় জুলাই বিপ্লব ও দুই শহীদকে স্মরণে আলোচনা সভা। দুপুরের খাবারের বিরতির পর দুপুর ২টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে অনুপম সাংস্কৃতিক সংসদ ও সারগাম সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা জুলাইয়ের গান, দেশাত্মবোধক গান, ইসলামী সঙ্গীত, কাওয়ালি, নাটক ও নাটিকা পরিবেশন করেন।

১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, সিএসই ক্লাব, মোরালিটি অ্যান্ড ইথিক্স ক্লাব, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব, ইইই ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব ও ছাত্র বিষয়ক বিভাগ এ আয়োজনে সহযোগিতা করে।