
এবার সমর্থক-আন্দোলনকারীদের সাথে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার। এদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটের রায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে।
আদালতের রায় তাদের পক্ষে না গেলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশমুখ কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন ইশরাক হোসেন। রাতে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যারা এত কষ্ট করলেন তাদের সাথেই থাকব। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তিনি বলেন, আমার সাথে বৈষম্য করা হচ্ছ। আমি আদালতের রায় পেয়েছি কিন্তু দায়িত্ব বুঝে পাচ্ছি না। আদালতের রায় আইন মন্ত্রণালয় হয়ে ইলেকশন কমিশনের কাছে এলো। তারা গেজেট প্রকাশ করলো। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে, আইন অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাপ করে আমার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা। এর বাইরে তাদের আর কিছু করার নাই।
ইশরাক অভিযোগ করে বলেন, বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে ‘জিম্মি’ করা হচ্ছে। যেমন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময় করা হতো। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এই বিষয়টা যদি আমরা এখন মাথায় না আনতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র কখনো প্রতিষ্ঠা হবে না।
ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তার সমর্থকরা। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারকে আলটিমেটাম দেয়া হয়। এদিন আন্দোলনের সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না এলে কঠোর কর্মসূচি ও ঢাকা অচল করে দেয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে হাইকোর্টসংলগ্ন মৎস্য ভবন ও যমুনার প্রবেশমুখে (কাকরাইল মসজিদসংলগ্ন) অবস্থান নেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা ও ইশরাক হোসেনের সমর্থককারীরা।
হাজার হাজার আন্দোলনকারী প্রথমে মৎস্য ভবন মোড়ে জড়ো হয়ে সড়কের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে কাকরাইল মসজিদসংলগ্ন যমুনার প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। এতে এই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টার দিকে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মসজিদের দিকে যাওয়ার সড়কটি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে বৃষ্টি নামে। এর মধ্যেই বিএনপির নেতা–কর্মীদের মিছিল ও স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা ইশরাকের
এর আগে বুধবার ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন লেখেন, ‘আন্দোলনকারী জনতার প্রতি সর্বাত্মক সংহতি জানাতে এবং তাদের সাথে যতদিন প্রয়োজন রাজপথে সহঅবস্থান করার জন্যে অল্প সময়ের মধ্যেই হাজির হব ইনশাআল্লাহ।’ এর আগে দুপুরে ফেসবুক তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে সমর্থকদের রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা দেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর আগ পর্যন্ত সমর্থকদের উদ্দেশে রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নির্দেশ একটাই- যতক্ষণ দরকার রাজপথ ছেড়ে ওঠে আসা যাবে না।’
এক দিন পিছিয়ে রিটের আদেশ কাল
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশ ঘোষণা পিছিয়েছে। বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার শুনানি নিয়ে আদেশের নতুন এ দিন ধার্য করেন।
রিটের ওপর শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার আদালত বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। রিটটি আদেশের জন্য আদালতের বুধবারের কার্যতালিকায় ১১ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। ক্রমঅনুসারে সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি উঠলে ইশরাকের আইনজীবী, রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে অংশ নেন। বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। এরপর আদেশের জন্য আগামীকাল সকালে সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন।
আদালতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিতর্কিত নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের অনুলিপি পেয়ে গত ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।