
স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্রদলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষ, সশস্ত্র হামলা এবং পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়ে ছাত্রদলের নিন্দা। ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)- এ একটি চরম অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দ। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখানে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি।
সর্বপ্রথম আমরা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব ন্যাক্কারজনক হামলাতে ও এসবের উস্কানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
তবে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ও অফলাইনে নিরন্তর অপপ্রচারের মাধ্যমে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা অপবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তার জবাবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করাটি অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার ভেতরে যাবার আগে বলে রাখা উচিৎ, যদিও আমরা এখানে তদন্তের দায়ভার নিয়ে এসেছি এবং মোটাদাগে একটি প্রতিবেদন আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট জমা দিবো, কিন্তু তার পরেও প্রশাসন কর্তৃক আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এইসব ঘটনার পুরো সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ সম্ভব হবে না।
তবে ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি/ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি সে অনুযায়ী গতকালকের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামক তিন জন ছাত্রদল সমর্থকের উপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিল থেকেই ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতে তেড়ে যেয়ে হামলার সূচনা করে। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের উপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যাক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই হাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন, এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর কোন কারণও তাদের নেই।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সহিংসতায় ছাত্রদলের উক্ত সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাঁদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী, এবং যেহেতু কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোন কমিটি গঠিত হয়নি, এবং এখনও পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য
ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তাঁরা তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোন ঘটনাকে "ছাত্রদলের হামলা" শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হবে সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।
পরবর্তীতে আরও জানা যায় যে, ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জ্বীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তাঁরা সহ আরো কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করে "সাধারণ শিক্ষার্থী" ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক বাহক ইসলামি ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা ও ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে "সাধারণ শিক্ষার্থী" পরিচয়ে উক্ত মব মিছিলটির পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের উপরোক্ত সমর্থকদের উপরে হামলা চালানো হয়।
এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সাথে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যাক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে "ছাত্রদলের হামলা" বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সাথে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটির সত্য রূপ পুরোই ভিন্ন।
আপনারা জেনে থাকবেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (ICCPR)-এর ধারা নং ১৯, ২১ ও ২২ অনুসারে রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হয়ে বাকস্বাধীনতার চর্চা ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা সকল শিক্ষার্থীর স্বীকৃত অধিকার। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের চর্চা যখন অসম্ভব, তখন সেই ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের সংস্কৃতির ধারক-বাহক গুপ্ত ও নিষিদ্ধ সংগঠন শিবির ও ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত ও অবৈধ উপায়ে ক্যাম্পাসসমূহে সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধরে গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে ক্যাম্পাসসমূহে নিজেদের অঘোষিত দখলদারিত্ব জারি রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশব্যাপী সকল ক্যাম্পাসে আমাদের সুস্থ-সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক রাজনীতির সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে এসব হীন ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এবং একই সাথে শিক্ষা-ঐক্য-প্রগতির ঝান্ডাবাহী সংগঠন হিসেবে এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) প্রবর্তিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক-বাহক হিসেবে যেকোন রূপে দখলদারিত্ব ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করার অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্যও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সদা বদ্ধপরিকর থাকবে।
পরিশেষে আবারও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এইসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ও এসবের উষ্কানিতে যেই জড়িত হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোঃ ইয়াহিয়া অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময়ে অনন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শ্যামল মালুম,সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সহ-সভাপতি সাফি ইসলাম,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহেদ ত হাসান,হাসানুর রহমান,শাহাদাত হোসেন,সোহেল রানা নূরুজ্জামান চন্দন প্রমূখ।