মোহামেডানকে হারিয়ে আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:30 এপ্রিল 2025, 03:54 দুপুর
news-banner

ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে তৃতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করেছে আবাহনী লি:। গতকাল আবাহনী ৬ উইকেটে হারিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্ধী মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবকে। ফলে এবারও শিরোপা খরা কাটাতে পারলো না মোহামেডান। প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ১৫ বছর পর ফাইনালে উঠেছিল মোহামেডান। টার্গেট ছিল এবার শিরোপা ঘরে তুলার। কিন্তু সেটা হতে দেয়নি আবাহনী। আবাহনীর কাছে বিধ্বস্ত হয়ে শিরোপা জেতার স্বপ্ন শেষ হয়েছে তাদের। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মোহামেডানের দেয়া ২৪১ রানের টার্গেটটা আবাহনী ৪০.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে টপকে যায়। ফলে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ ৬ উইকেটে জিতে ২৪তম শিরোপা জয় করে আবাহনী। এর আগে আরও দুইবার হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছিল তারা। এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক শিরোপা নিশ্চিত করেছে। ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ মৌসুমে আবাহনী প্রথমবার হ্যাটট্রিক করেছিল।

দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক আসে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ মৌসুমে। এবার এসেছে তৃতীয় হ্যাটট্রিক। ২০২২-২৩ সালে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এবং ২০২৩-২৪ সালে শেখজামালকে হারিয়ে শিরোপা জেতা আবাহনী এবার মোহামেডানকে হারিয়েছে। সবমিলিয়ে এটি তাদের ২৪তম শিরোপা। বিপরীতে মোহামেডানের শিরোপা ৯টি। তবে ঢাকা লিগ লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর কোনও শিরোপা জেতেনি মোহামেডান। সর্বশেষ ২০০৯-১০ মৌসুমে শিরোপা জিতেছে তারা। গতকাল আগে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতায় মোহামেডান ২৪০ রানের বেশি করতে পারেনি। জবাবে ২৪১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই আবাহনীর ওপেনার শাহরিয়ার কমলকে (১) ফেরায় মোহামেডান। এরপর পারভেজ হোসেন ইমন ও জিসান আলম মিলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। পারভেজ ২৮ রানে আউট হওয়ার পর মেহরবা হোসেন (১০) দ্রুত ফেরেন। জিসান অবশ্য ৫৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। তাতে ১০৪ রানে চার উইকেট হারানোর পর মোসাদ্দেক হোসেন ও মিঠুন মিলে অবিচ্ছিন্ন ১৩৫ রানের জুটি গড়ে আবাহনীর জয় নিশ্চিত করেন। মিঠুন ৬৯ বলে ৬৬ এবং মোসাদ্দেক ৬৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। তাদের ব্যাটিংয়ে ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে নাসুম আহমেদকে মিডউইকেট দিয়ে চার মেরে আবাহনীকে হ্যাটট্রিক শিরোপার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। বল বাউন্ডারি লাইনে যেতেই আবাহনীর ড্রেসিংরুম থেকে দৌড়ে উইকেটে চলে আসেন বাকি ক্রিকেটাররা। স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করতে যে যার মতো স্ট্যাম্প তুলে নেন। আবাহনী যখন জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা, মোহামেডান তখন মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে ব্যস্ত। ঠিক তখনই উত্তেজনা ছড়ায় মাঠে

মোহামেডানের গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু দর্শক ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করেন। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাহমুদউল্লাহ। দেয়াল টপকে মাহমুদউল্লাহ গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে ওঠে ভক্তের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান! মিরপুরে টস জিতে মোহামেডানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় আবাহনী। দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও তৌফিক খান তুষার মিলে সাবধানী শুরু করেছিলেন। তাদের ৫০ রানের জুটির পর কিছুটা ছন্দ হারায় মোহামেডান। তৌফিক ১৬ রানে আউট হলে দারুণ খেলতে থাকা রনিও সাজঘরে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৪৭ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। এরপর আনিসুল ইসলাম ১৫ ও ফরহাদ হোসেন ৪২ রান করে আউট হন। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম মিলে গড়েন ১০০ রানে গুরুত্বপূর্ণ জুটি। এই জুটির পর মনে হচ্ছিল, মোহামেডানের স্কোরটা দেড়শ ছাড়িয়ে যাবে। যদিও শেষ অব্দি ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ২৪০ রানে। আরিফুল ও মাহমুদউল্লাহ দু’জনই খেলেন ৫০ রানের ইনিংস। শেষ দুই ওভারে মোহামেডানের ব্যাটাররা ১২ রানের বেশি করতে পারেনি। সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ ব্যর্থ হন স্লগ ওভারে রান তুলতে। আবাহনীর বোলারদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দুটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া রিপন মন্ডল, মেহরাব হোসেন ও মাহফিজুর রহমান রাব্বি প্রত্যেকে একটি করে উইকেট শিকার করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪০/৭ (রনি ৪৫, তৌফিক ১৬, আনিসুল ১৫, ফরহাদ ৪২, মাহমুদউল্লাহ ৫০, আরিফুল ৫০, সাইফ ৫, নাসুম ৪*, মুস্তাফিজ ৫*; রিপন ৮-০-৫৩-১, রকিবুল ১০-০-৩৬-০, মৃত্যুঞ্জয় ৭-০-৪৬-২, মাহফুজুর ১০-১-৩৮-১, মোসাদ্দেক ১০-১-৩৯-২, মেহরব ৫-০-২৬-১)

আবাহনী লিমিটেড: ৪০.৪ ওভারে ২৪৩/৪ (শাহরিয়ার ১, পারভেজ ২৮, জিশান ৫৫, মেহরব ১০, মিঠুন ৬৬*, মোসাদ্দেক ৭৮*; এবাদত ৮-১-৪৭-১, মুস্তাফিজ ৭-১-৩৭-০, সাইফ ৭-০-৫১-১, নাসুম ৯.৪-০-৫৯-২, নাবিল ৩-০-২৭-০, মাহমুদউল্লাহ ৫-০-১৭-০, আরিফুল ১-০-৩-০)

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন।

মুল্যবান মন্তব্য করুন